Durnitibarta.com
ঢাকাবুধবার , ৩০ অক্টোবর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রতারনার টাকায় কোটিপতি স্বামী-স্ত্রী দম্পতি

প্রতিবেদক
Dhaka Office
অক্টোবর ৩০, ২০২৪ ৪:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হাসান যুবরাজ: জমির দলিল জালিয়াতি, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জাল নথিপত্র তৈরি, অন্যের ফ্ল্যাট দখল করাসহ ব্ল্যাকমেইলিং’র মাস্টার কাজী মশিউর হোসেন দীপু ও শারমিন আক্তার দম্পতি। বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার কাজীবাড়ি আমিরাবাদে। এসব প্রতারণা করেই হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। অবৈধ টাকা দিয়ে নরসিংদীর শিবপুরে কয়েকশত বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়াও নিজ জেলা মাদারীপুর সদরের প্রায় ৮৪ বিঘা জমি কিনেন তারা। জালিয়াতি ধরা পড়ার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েও বন্ধ হয়নি তাদের প্রতারণা। দীপু দম্পতির বিরুদ্ধে ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদীর জেলার আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন আছে।

জানা যায়, দীপু প্রথমে টার্গেট করেন ওই সমস্ত জমির মালিকদের যারা আর্থিকভাবে দুর্বল ও জমি দলিলের বিষয়ে আনাড়ি। পরে তিনি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেন। বিভিন্নভাবে মামলায় সহায়তার কথা বলে তাদের সমস্ত দলিলপত্র নিজের দখলে নিয়ে নেন। মামলা পরিচালনার কথা বলে তাদের কাছ থেকে কখনো নিজ নামে, কখনো তার স্ত্রীর নামে জাল দলিল করেন। পরে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা হাতিয়ে নেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টঙ্গী থানার পাগাড় হাউজিং সোসাইটির ১০ জন অংশিদারের মধ্যে একজন কাজী আবদুল হালিম। কাজী আবদুল হালিমের মৃত্যুর পর পাগাড় মৌজার বিভিন্ন দাগে ৭৪.১৮ একর সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন তার ৪ পুত্র কাজী মুহাম্মদ নাছিরুল হক, কাজী নঈমুল হক, কাজী আলী আজম, কাজী আলী আজিম ও ৩ কন্যা সাঈদা আক্তার, জাফরিন আক্তার কাজল, সেলিনা আক্তার। পরবর্তীতে কিছু সম্পত্তি তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন।

কিন্তু ৭৪৬৩ নম্বর দলিল মূলে দেখা যায় কাজী আলী আজিমের অবিক্রীত সম্পত্তির মালিক কাজী মশিউর হোসেন দীপু। দলিল মতে ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল টঙ্গী সাব-রেজিস্টি অফিসে শারমিন আক্তার তার স্বামী কাজী মশিউর হোসেন দীপুর নামে হেবা দলিল করে এ জমির মালিকা হস্তান্তর করেন। যা ১৯৮৯ সালের ১৭ জানুয়ারী আব্দুল হালিমের অবিক্রীত সম্পত্তির শেয়ার ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে তার মালিক হন শারমিন আক্তার। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য শারমিনের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে শারমিনের বয়স ছিল দুই বছর। মাত্র দুই বছর বয়সে কি করে কেউ ২০ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করতে পারেন তা কারো বোধগম্য নয়। পরে গাজীপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডরুমে দলিল নম্বর ও দাতা গ্রহীতার নাম উল্লেখ করে দলিল তল্লাশি করে দেখা যায়, ওই তারিখে এরকম কোন দলিল রেজিস্ট্রি হয়নি।

এদিকে পাগাড় হাউজিং সোসাইটির আরেক অংশীদার আহাম্মদ আলী সরদার ২০০২ সালের ১৩ মার্চ তার শেয়ার শারমিন আক্তারকে হস্তান্তর করেন এমন একটি দলিল প্রকাশ পায়। যে দলিলে কোন প্রকার তপছিল ও চৌহদ্দি উল্লেখ নেই। পরে খোজঁ নিয়ে জানা যায়, আহাম্মদ আলী সরদার উল্লেখিত শেয়ার হস্তান্তরের ১ বছর আগে ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরে কিভাবে তিনি তার শেয়ার শারমিন আক্তারকে দিয়েছেন তার উত্তর খোজঁতে গেলে সহজেই বুঝা যায় যে শারমিন আক্তার দলিল জালিয়াতি করেছেন।

এমনকি ওই সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে ২০০০ সালের ১৮ জুলাই পাগাড় হাউজিং সোসাইটির আরেক অংশীদার নেওয়াজ খানের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক দেখিয়ে শ্যামুয়েল সবাশ বাইড় গং বাদী হয়ে কাজী নাছিরুল হক গং সহ ১৫ জনকে বিবাদী ও শারমিন আক্তারকে শারমিন আক্তারকে মোকাবেলা বিবাদী করে গাজীপুর জেলার ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। পরবর্তীতে ওই মামলা ২০০৮ সালের ২১ জুলাই খারিজের আদেশ হয় এবং ওই মাসের ২১ তারিখে রায় ও ডিক্রি প্রকাশিত হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কাজী আবদুল হালিমের ওয়ারিশ কাজী মো. নাছিরুল হকের সঙ্গে ২০০০ সালের ৭ নভেম্বর টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি চুক্তিনামা দলিল ও ২০০৪ সালের ১৭ অক্টোবর একটি পার্টিশন দলিল করেন করেন কাজী মশিউর হোসেন দীপু। এখন প্রশ্ন আসে যদি দীপু বা তার স্ত্রী শারমিন যদি কাজী আবদুল হালিমের অবিক্রীত ষোলআনা সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকে তাহলে কাজী আবদুল হালিমের ওয়ারিশ কাজী মো. নাছিরুল হকের ২টি পার্টিশন দলিল কেন করলেন দীপু ?

স্থানীয় ও ভোক্তভুগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮৯ সালের শেয়ার হস্তান্তর দলিলটি একটি ভুয়া ও জাল দলিল, যার দ্বারা শারমিন ও দিপুর কোন মালিকানা অর্জিত হনিন। শারমিন ও দীপুদম্পতি এভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ঢাকার গোপীবাগে এক ব্যক্তির ফ্ল্যাট জোরপূর্বক দখলে নিয়ে তাতে বিনা ভাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে দীপুও তার স্ত্রী।
এসকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাজী মশিউর হোসেন দীপুও শারমিন আক্তারকে ফোন করলে তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমএস করেও কোন উত্তর মেলেনি।