ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেন গৌরীপুর আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নবঞ্চিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ তায়েবুর রহমান হিরণের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার রাত থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনা চলছিল।
শনিবার রাতে জেলা উত্তর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন পাপ্পুর কার্যালয়ে হামলা ও দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনায় যৌথ বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসহ চারজনকে আটক করে।
রবিবার বিকেলে দুই পক্ষই পৃথক স্থানে সমাবেশ আহ্বান করে। ইকবাল হোসেনের সমর্থকরা গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেল মাঠে এবং হিরণপক্ষ ধানমহাল মধ্যবাজার এলাকায় সমাবেশের আয়োজন করে। বিকেল চারটার দিকে উভয় পক্ষ নিজ নিজ মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাওয়ার সময় পাটবাজার এলাকায় মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষই ইট-পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। এসময় চারপাশের দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সংঘর্ষে নারী সমাবেশের মঞ্চ, পৌর বিএনপির কার্যালয়সহ অন্তত ৪০টিরও বেশি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। বেশ কয়েকটি দোকান ও কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে তানজির আহমেদ আবিদ (২৮) নামে স্থানীয় এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন বলে ইকবালপক্ষ দাবি করেছে। আহতদের মধ্যে রবিন, জামাল ও রানা নামে কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলী আকবর আনিছ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান হোসেন জুয়েল, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাছুল হক ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেলের কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইকবালপক্ষের নেতা হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ বলেন, “শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাওয়ার পথে হিরণপক্ষ অতর্কিত হামলা চালায়। এমনকি ইঞ্জিনিয়ার ইকবালের গাড়িবহরেও হামলা হয়। এতে আমাদের এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন।”
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ তায়েবুর রহমান হিরন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “ইঞ্জিনিয়ার ইকবালের উপস্থিতিতে তার সমর্থকরা অস্ত্র নিয়ে আমাদের মহিলা সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। এতে আমার স্ত্রী সাঈদা মাশরুরসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন।”
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “সন্ধ্যার পর থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে টহল দিচ্ছে, যাতে নতুন করে কোনো সংঘর্ষ না ঘটে।”

